বাংলাদেশে ই-টিকেটিং ও বক্স অফিস চালু করতে বাধা কোথায়

 

বাংলাদেশে ই-টিকেটিং ও বক্স অফিস চালু করতে বাধা কোথায়



‘ক’ নামের সিনেমা চলছে না, এমন কথা যেমন শোনা যায়, তেমনি ‘খ’ নামের সিনেমা দেখতে লম্বা লাইন, তা–ও শোনা যায়। দেশে হাতে গোনা যে কটি প্রেক্ষাগৃহে ডিজিটালি টিকিট সংগ্রহ করার ব্যবস্থা আছে, সেখানেও অনলাইনে ঢুঁ মেরে কখনো টিকিট না পাওয়ার খবর প্রকাশ্যে আসে। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশি ছবির ক্ষেত্রে সিঙ্গেল স্ক্রিন থেকে মাল্টিপ্লেক্স —সবখানে টিকিটের দীর্ঘ লাইন দৃশ্যমান।

ঢাকার মধুমিতা ও স্টার সিনেপ্লেক্সে যেমন এই দৃশ্য দেখা যায়, তেমনি গাইবান্ধার রোমা কিংবা ময়মনসিংয়ের ছায়াবাণীতেও। দর্শক সাড়ার পরও সঠিক জানা যায় না, কত টাকার টিকিট বিক্রি হলো। দিন বা সপ্তাহে, এমনকি মাস পার হলেও মুক্তি পাওয়া সিনেমার বক্স অফিস সংগ্রহ কত, তা প্রকাশ্যে আসে না। প্রযোজকেরা যাঁর যা খুশি, তা–ই বলে দেন; তা বিশ্বাস করে তৃপ্ত থাকেন ছবিপ্রেমীরা।দেশ স্বাধীনের পাঁচ দশক পার হয়েছে, এখনো কার্যকর হয়নি বক্স অফিস। অথচ আড়াই দশক আগে ভারত বক্স অফিস কার্যকর করে। এমনটাই জানান দেশটির প্রভাবশালী একাধিক প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের কর্তা। তাঁদের মতে, বক্স অফিস না থাকার কারণে দেশটিতে বিক্রির স্বচ্ছতা থাকত না। আয়কর ফাঁকিরও সুযোগও ছিল। বক্স অফিস কার্যকর হওয়ায় হিসাবে স্বচ্ছতা এসেছে। চুরি হয় না বললেই চলে। প্রদর্শনী শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে কটা টিকিট বিক্রি হলো, কটা আসন খালি থাকল, কত টাকা আয় হলো, সব হিসাব জানা যায়। এরপর তা প্রযোজক–পরিবেশককে জানিয়ে দেওয়া হয়।

ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ দেশের বাইরে সিনেমার টিকিট বিক্রির হিসাব নিয়ে যে কটি সংস্থা কাজ করে, তার মধ্যে বিশ্বাসযোগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বক্স অফিস ইন্ডিয়া, কমস্কোর মুভিজ, স্যাকনিল্ক। কোনো ছবি মুক্তি পেলে প্রতিনিয়ত তার আয়–ব্যয়ের হিসাব দিয়ে থাকে এসব সংস্থা।চলচ্চিত্র–বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতে বক্স অফিস কার্যকরে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছে ভারতের প্রযোজক, পরিবেশকদের সংগঠন দ্য ইন্ডিয়ান মোশন পিকচার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (ইমপা)। বাংলাদেশে চলচ্চিত্র সংগঠনের অভাব না থাকলেও বক্স অফিস কার্যকরে তাদের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এককভাবে কেউ চাইলে বক্স অফিস কার্যকর করা কঠিন। প্রভাবিত হয়ে একপেশে প্রতিবেদন দেওয়ার সুযোগ থেকে যায়। তাই সরকারি তদারকিরও দরকার মনে করছেন বাংলাদেশ ও ভারতের চলচ্চিত্র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কেউ কেউ। তাঁদের বেশির ভাগের মতে,  প্রযোজক, পরিবেশক, হলমালিকদের সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।

‘প্রিয়তমা’, ‘তুফান’, ‘রাজকুমার’, ‘সুড়ঙ্গ’, ‘হাওয়া’, ‘পরাণ’ সিনেমাগুলো দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শকের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। ছবিগুলো ব্লকবাস্টার, ‘হিট’, ‘সুপারহিট’ ‘বাম্পার হিট’ তকমাও পেয়েছে। কিন্তু কত আয় হলো, কতজন দেখলেন, তার সঠিক কোনো হিসাব সামনে আসে না।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url